রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

করোনা রোগীর লাশ দাফন: মানবতার ডাকে সাড়া দিন

করোনা রোগীর লাশ দাফন: মানবতার ডাকে সাড়া দিন

‘করোনা বিপর্যয়’, তথা এই ভয়াবহ ভাইরাসের নজিরবিহীন সংক্রমণ, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এত বেশি আতঙ্ক আর উদ্বেগ সঞ্চারিত করেছে যে, জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় সব দেশে চলছে এই ভাইরাসের ভয়াল তাণ্ডব। গত শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখেরও বেশি নারী-পুরুষ। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই করোনায় এক হাজার ৮৩৮ জন আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ৭৫। এ দেশে এবং বিশ্বের অন্যত্র করোনা জীবাণুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে প্রতিদিন। তদুপরি, মৃতদের শেষকৃত্য নিয়ে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা মহামারীর বিস্তার কিভাবে, কিসের মাধ্যমে এবং কোন কোন প্রক্রিয়ায় হয়, সে ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণা এবং তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। কেউ যদি সত্যিই করোনাঘটিত রোগে মৃত্যুবরণ করে থাকেন, তার লাশের মাধ্যমে এ রোগ সংক্রমণের কোনো প্রমাণ আজো মেলেনি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, তবুও উদ্বেগমুক্ত থাকার জন্য নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার, অর্থাৎ সুরক্ষার ব্যবস্থা করে যে কেউ করোনা রোগীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারেন। আর এটা ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্বও বটে। তবে করোনার কারণে পৃথিবীব্যাপী মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করায় করোনা রোগে যারা মারা গেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের লাশের দাফন বা সৎকার করা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা জীবাণুতে আক্রান্তের সংখ্যার মতো মৃত্যুর পরিসংখ্যানও সর্বাধিক। বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ নিউ ইয়র্ক নগরীতে বহু বাংলাদেশীসহ আক্রান্ত ও মৃতের হার সবচেয়ে বেশি। এই মহানগরীতে মর্গে লাশের ঠাঁই হচ্ছে না এবং গোরস্থানে বিক্রির মতো কবরের প্লটও আর বাকি নেই। ফলে গণকবরে একসাথে অনেকের লাশ সমাহিত করতে হচ্ছে। ব্রিটেনেও করোনায় মৃত ব্যক্তিদের সমাহিত করা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
পত্রিকার খবরে জানা যায়, ভারতে করোনায় মৃত, হিন্দু ব্যক্তির লাশের সৎকার করেনি স্বধর্মী স্বজনরা। যদি এ লাশ থেকে তারাও করোনা জীবাণুুতে সংক্রমিত হয়Ñ এ আশঙ্কায় তারা এগিয়ে আসেনি। হিন্দু ব্যক্তিটির লাশকে মুসলমানরা খাটিয়ায় বহন করে সৎকারের জন্য নিয়ে গেছে। আমাদের বাংলাদেশেও অবস্থা ভিন্ন নয়। করোনায় ছেলের মৃত্যু হলে মাকে সারা রাত হাসপাতালে তার লাশ নিয়ে একা বসে থাকতে হয়েছে কেউ না আসায়। সিলেটে এক প্রবাসী নারী হাসপাতালে মারা গেলে করোনা সন্দেহে কেউ আসেনি তার লাশ নিতে। তাই গোসল ও নামাজে জানাজা ছাড়াই তাকে অন্য জেলার এক নির্জন স্থানে মাটিচাপা দিয়েছে প্রশাসন। অথচ করোনায় তার মৃত্যু হয়নি। ঝিনাইদহে করোনার মতো উপসর্গে মৃত্যু হলে এক ব্যক্তির লাশের জানাজা ও দাফনের দায়িত্ব নিতে হয় সরকারকে। স্থানীয় ইউএনও জানাজা পড়িয়ে লাশটিকে কবর দিয়েছেন। তার কোনো স্বজন ছিল না কাছে।
মানুষের মৃত্যু যে কারণেই হোক, নিজ নিজ ধর্মমতে তার লাশের সৎকার করা অন্যদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। এটা মানবতার তাগিদ এবং ধর্মীয় করণীয় নিঃসন্দেহে। সবাইকে এই কর্তব্য পালনে যথাসময়ে এগিয়ে আসতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877